কয়লার অভাবে দিনাজপুর বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র  বন্ধ !

মন্জুর আলী শাহ, দিনাজপুর প্রতিনিধিঃ অবশেষে  কয়লার অভাবে  অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেল দেশে’র একমাত্র কয়লা ভিত্তিক দিনাজপুরের ৫২৫ মেগাওয়াট  বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। রোববার রাত ১০টার পর বন্ধ হয়ে গেছে। কয়লার অভাবে তা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) কর্তৃপক্ষ।
বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কয়লা সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় উৎপাদন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ার এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। এতে চরম বিদ্যুৎ সংকটে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে রংপুর বিভাগের আট জেলায়। জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডেও এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কয়লা সঙ্কটের জন্য খনি কর্তৃপক্ষের দুর্নীতিকে দুষছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে এক লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা উধাওয়ের ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির এমডিসহ চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে পেট্রোবাংলা।
দেশের একমাত্র কয়লাভিত্তিক দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে তিনটি ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ৫২৫ মেগাওয়াট। এর মধ্যে গত ১৬ জুন ২৭৫ মেগাওয়াটের ইউনিটটি বন্ধ করে দেয়া হয়। কয়লা সংকটে ঝুঁকিতে পড়ে ২৫০ মেগাওয়াটের বাকি দুটি ইউনিট। এ কেন্দ্র দুটির উৎপাদন কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে, গত বছরে অক্টোবরে খনি কর্তৃপক্ষকে প্রতিদিন ৫ হাজার ২০০ মেট্রিক টন কয়লা সরবরাহ নিশ্চিত করতে বলা হয়।
খনি কর্তৃপক্ষ জানায়, ইয়ার্ডে কয়লা মজুদ না থাকায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে বাধ্য হয়েই রোববার রাত ১০টার দিকে ২৫০ মেগাওয়াটের বাকি দুটি ইউনিটও বন্ধ করে দেয়া হয়।
বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল হাকিম জানান, এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিসিএমসিএল। তারা কয়লা সরবরাহ করতে পারছে না। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালাতে প্রতিদিন সাড়ে চার হাজার টন কয়লা প্রয়োজন হয়। কিন্তু খনিতে সাময়িকভাবে কয়লা উত্তোলন বন্ধ থাকায় এবং মজুদ ফুরিয়ে আসায় ৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের তিনটি ইউনিটই বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
এদিকে, কয়লা মজুদের গড়মিলের ঘটনায় খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ওএসডি, মহা-ব্যবস্থাপককে বদলি এবং দুজন উপ- মহাব্যবস্থাপককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ঘটনা তদনে Í পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) মো. কামরুজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
কয়লা উধাও হওয়ার জন্য খনি কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করেছেন শ্রমিকরা।কেন্দ্রের তিনটি ইউনিটের  মধ্যে কয়েকদিন থেকে দু’টি ইউনিট বন্ধ ছিলো। চালু ছিলো মাত্র ১৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন।  কিন্তু কয়লার অভাবে তা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) কর্তৃপক্ষ।  এর সত্যতা স্বীকার করেছেন, পিডিবির সদস্য (বিতরণ) সাঈদ আহমেদ।কয়লা সংকটে ৫২৫ মগোওয়াট তাপবদ্যিুৎ কন্দ্রেরে উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এতে বিদ্যুৎ সংকটে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্জলে বলে তিনি জানিয়েছেন।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে উত্তোলনকৃত ১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা গায়েব হয়ে যাওয়ায় তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চাহিদা অনুযায়ী কয়লা সরবরাহ পাচ্ছেনা কর্তৃপক্ষ। বর্তমান বাজার দরের  ২২৭ কোটি টাকার কয়লা ১ লাখ ৪২ হাজার মেট্রিক টন কয়লা গয়েব হয়ে গেছে।এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির (বিসিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও একজন মহাব্যবস্থাপককে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সেই সাথে আরও একজন মহাব্যবস্থাপক ও উপ-মহাব্যবস্থাপককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে কয়লা খনি কোম্পানিটির নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষ।এ নিয়ে বেশ তোলাপাড় চলছে। ঘটনাটি তদন্তে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন এন্ড মাইনস) মো. কামরুজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বড়পুকুরিয়া খনি সংশ্লিষ্টরা জানান, এই খনি থেকে খোলা বাজারে কয়লা বিক্রি করা হয়। এই বিক্রিতে একটি মহল বেশি পরিমাণ কয়লা বিক্রি করে খাতায় কম হিসাব দেখাতে পারে। আবার কয়লা না তুলেও চীনা কোম্পানি অতিরিক্ত উত্তোলন দেখিয়ে বেশি অর্থ নিয়ে যেতে পারে। তবে, সবকিছুই তদন্ত শেষে জানা যাবে বলে জানায়,সংশ্লিষ্টরা।
গত সপ্তাহে খনির শিফট পরিবর্তনের সময় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কয়লা সংকটে পড়ায় বিষয়টি সবার নজরে আসে। পিডিবির সদস্য সাঈদ আহমেদই কয়লা খনি পরিদর্শনের গিয়ে মাত্র ১০ হাজার টন কয়লা মজুদ পান। ওই সময় তিনি বলেন, ‘এক সপ্তাহের মধ্যেই কয়লার অভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাবে। ওই সময় কয়লা গায়েবের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়।’
তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের চিফ ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হাকিম জানিয়েছেন,৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের তিনটি ইউনিট চালু রাখতে দৈনিক ৫ হাজার ২০০ মেট্রিক টন কয়লা প্রয়োজন। কিন্তু বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি কর্তৃপক্ষ এক সপ্তাহ ধরে  বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দিনে ৬০০ থেকে ৭০০ টন কয়লা সরবরাহ করেছে। এতে প্রথম, দ্বিতীয় ইউনিটটি বন্ধ হওয়ার  করা হয়।
এ দিকে বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরচিালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দনি আহমদ বলনে, ২০০৫ সাল থেেক এ র্পযন্ত এক কোটি ২০ লাখ মেট্রকি টন কয়লা উত্তোলন করা হয়। খোলা আকাশরে নিচে কয়লা রাখা হয়। এতে সিস্টেম লস হয়রেয়। রোদে শুকিয়ে, পানেিত ধুয়ে, বাতাসে উড়ে গেেছ কয়লা। মাটিতে মিশে অনকে কয়লা নষ্ট হয়েছে। এটা বোর্ডকে জানানো হয়েছে। এ নিয়ে কজে করছে র্বোড। যে অভিযোগ উঠেছে তা কোনো ভাবইে প্রমাণ করা যাবে না। তদন্তে সিস্টেম লসের বিষয়টি বেরিয়ে আসবে।
বড়পুকুরয়িা কোল মাইনিং কোম্পানরি মহাব্যবস্থাপক এবএিম কামরুজ্জামান জানান, আগামী সেপ্টম্বর মাস থেেক নতুন ফইেজ থেেক কয়লা উত্তোলন শুরু হবে। কয়লা উত্তোলন শুরু হলইে কয়লার এ সংকট কেটে যাবে।
বার্তা প্রেরক

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment